দাপট কমেনি সীমান্তের ত্রাস হাশু’র
বিশেষ প্রতিনিধি।
কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তে শাহপরীরদ্বীপে অপরাধ জগতের রাজা শামসুল আলম ওরফে শামিম (৩৮)। সে সাবেক এমপি ইয়াবা ডন নামে খ্যাত আবদুর রহমান বদির ভাগিনা। ২০১৯ সালে ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার কথা দিয়ে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারিদের একজন শামীম। কিন্তু আলোর পথে না এসে তার অপরাধে খাতায় যোগ হয় চোরাচালান, অস্ত্র- মানব পাচার। মূলত বদি স্বজন হওয়ায় সীমান্তে ত্রাস সৃষ্টি গড়ে তুলে। সে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ার এলাকার আলকাজ মিয়ার ছেলে টেকনাফ উপজেল শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সদরের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়ার অপরাধ জগতের ঘনিষ্ট সহযোগী। তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও , মানব পাচারের মামলা রয়েছে থানায়। এছাড়া সম্প্রতি টেকনাফ উপজেলায় যে ক’জন ব্যক্তি রোহিঙ্গা আদম পাচারে সাথে জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে শীর্ষ অবস্থানে।
ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনে দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসানের পর শামীম আত্মগোপন যাওয়ায় মুখ খুলছেন ভুক্তভোগী সহ স্থানীয়রা। সীমান্তের ত্রাস শামীমের একে একে অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
কিছু দিন আগে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহত ভারী গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এসব গোলাবারুদের শামীমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘সীমান্তের শীর্ষ অপরাধীর বিষয়টি অবহিত হয়েছি। তার বিরুদ্ধে দ্রত আইনী পদক্ষেপ প্রহন করা হবে। কোন অপরাধী পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’
যত মামলা শামীমের
পুলিশ জানায়, সীমান্তে র্দীঘদিন ধরে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ সঙ্গে জড়িত ছিল শামীম। মূলত সাবেক এমপি নিকটমত আত্মীয় হওয়ার সুবাদে সীমান্তে তার দাপট ছিল। তাকে ধরতে পুলিশ কাজ করছে। তাছাড়া তার একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে টেকনাফ থানায় একটি ইয়াবা মামলা রয়েছে। (মামলা নং-২৭/৯৯)। আরেকটি অস্ত্র মামলা ২০২৯ সালের টেকনাফ থানা। ( মামলা নং নং-২৬/৯৮)। মানবপাচারের মামলা হয় একটি ২০১৫ সালে টেকনাফ থানায়। (মামলা নং-২৯৯/১৫)।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারী ও ইয়াবা কারবারি হিসেবে চিহ্নিত শামসুল আলম শামিম ওরফে হাশু।
যেভাবে উত্থান শামীমের
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, শামসুল আলম শামিম ওরফে হাশু ছিল একজন জেলে। সাগর-নাফনদীতে মাছ শিকারের সুবাদে ইয়াবারকারিদের সাথে সাক্ষাত গড়ে উঠে। এরপর সেই নিজের মাদক চালানের সঙ্গে জড়ি পরেন। তাকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। তখন থেকে ইয়াবার ছোঁয়ায় তার জীবন বদলে যায়। মাকদের টাকায় বনে যায় কোটি টাকার মালিক। তবে মাদককের বিরুদ্ধের সরকারের অভিযান জোরদার হলে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা চোরাকারবারিদের একজন শামীম। ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার কথা দিয়েও কথা রাখেনি টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ এলাকার ইয়াবা সাম্রাজ্যের রাজা শামীম। আত্মসমর্পণ করে কারাভোগ শেষে নিজ এলাকায় এসেই আবারো গড়ে তোলে ইয়াবার রাজ্য। সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির ক্ষমতায় নিজের অপরাধ ডেকে রাখতো শামীম।
সীমান্তে বাসিন্দারা জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতে প্রতিদিন শাহপরীরদ্বীপ বিভিন্ন ঘাট থেকে তার নেতৃত্বে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং তাদের সঙ্গে অস্ত্র, ইয়াবা স্বর্ণ এদেশে এনে পাচার করে। এই কাজের জন্য উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক রয়েছে কয়েকটি দালাল চক্র।
জেল থেকে এসে ফের মাদকের জড়ায়
১৮ মাস পর জেল থেকে বেরিয়ে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পরেন। এরপর থেকে স্থানীয় ও মিয়ানমার কেন্দ্রিক কয়েকটি মাদক সিন্ডিকেটের সাথে আতাত করে শাহপরীরদ্বীপ ঘাট দিয়ে মাদকের চালান খালাস শুরু করে। এছাড়াও মিয়ানমার থেকে গবাবী পশু এনে রাতের আধারে এই ঘাট দিয়ে উঠায়। বিনিময়ে ভোগ্য পন্য পাঠায়। এসব নিয়ন্ত্রন করতে এলাকার বিপথগামী উঠতি বয়সী কিশোরদের নিয়ে গড়ে তুলে কিশোরগ্যাং। নিজেকে আরো শক্তিশালী করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর র্সোস পরিচয় দিয়ে থাকে। সে সুবাদে নাফনদীতে রাজত্ব ছিল তার। কিছুদিন যেতে না যেতে নাফনদী থেকে একটি ইয়াবা চালান ধরা পরে। পরে জানতে পারেন ইয়াবার চালান ছিল শামীমের। সেসময় থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় মাদকের। কেউ মুখ খুললে উল্টো মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শামীমের রোষানালে শিকার শাহপরীর দ্বীপে বাসিন্দা মো. করিম ও মো. জিয়া বলেন, শাহপরীরদ্বীপ নৌ ঘাট থেকে অন্যান্য কারবারীদের মাদকের চালান খালাস করে দেয়ার পর তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাদক গুলো লবন বোঝাই ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে থাকে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ মুখ খুললেই কিশোরগ্যাং এর সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালায় এবং তাদের কে ইয়বা ও অস্ত্র দিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কে ধরিয়ে দেয়। এভাবে সে এলাকার মুর্তিমান আতংকে পরিনত হয়েছে। হাশু সীমান্ত এলাকায় ত্রাসে পরিনতে হয়েছে। সে একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। মিয়ানমার সাথে তার সিন্ডিকেট রয়েছে। নাফনদীতে সে ছাড়া আর কেউ মাছ শিকার করতে পারছেনা।
স্থানীয় ইউপি এক ইউপি সদস্য বলেন, আব্দুর রহমান বদির আত্মীয় পরিচয়ে কিশোরগ্যাং দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে। শাহপরীর দ্বীপ ও নয়াপাড়া কেন্দ্রীক সীমান্ত চোরাচালানে শামসুল আলম এখন আলোচিত নাম।
নাম প্রকাশে অচ্ছিুক কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, টেকনাফ সীমান্তে অস্ত্র পাচারের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। তা নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রত অপরাধীকে আটক করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিক কল করে পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত শামসুল আলম ওরফে শামিমকে।
Social Plugin